করোনার এই সময়টাতে পুরো বিশ্ব জুড়ে সকলে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যার সম্মুখীন হবে, সেটি হচ্ছে আগামীর দিন গুলোতে নিজেকে এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলা। নিজের জন্য নিজের অনুপ্রেরনা তৈরী করতে হবে। এই সময়ের প্রত্যেকটা মুহুর্তই হচ্ছে এক একটি চ্যলেঞ্জ।
“যেকোন চ্যলেঞ্জকে ছোট করে না দেখে, নিজেকে বড় করে চ্যলেঞ্জ থেকে বড় করে তুলো।“- জন সি. ম্যাক্সওয়েল
সুফল পেতে হলে, অনুপ্রেরণা ও দক্ষতা প্রয়োজন। অনুপ্রেরনা দ্বারা সবকিছুই সম্ভব।
ইচ্ছা না থাকলে, উপায় বের করা যায়না। নিজের ব্যক্তিগত দক্ষতাকে আরও উন্নত করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে অনুপ্রেরনা এবং নিজের উদ্যমতাকে কার্যকর করে তোলা।
যদি তুমি তোমার অনুপ্রেরণাগুলোকে কাজে লাগাতে পার, তবে তোমার জীবনের যেকোন খারাপ পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা করতে পারবে, সেই সাথে তুমি নিজেকে উৎসাহী করে তুলতে পারবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে, নতুন নতুন অভজ্ঞতা অর্জন করার ক্ষেত্রে এবং নিজের অগ্রগতির পথ অনুসরন করার ক্ষেত্রে।
আজকের পোষ্টটিতে আমি অনুপ্রেরনাকে আরো সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলব এবং কিছু কার্যকরি অনুপ্রেরনামুলক সুত্র দিব।
১.নিজের গুনাবলি চিহ্নিত করাঃ
এটি একটি অন্যতম রহস্য। যে কাজটি তুমি করছো সেই কাজের মাধ্যমে যদি নিজের দক্ষতা বা গুনাবলিকে চিহ্নিত করতে পার সেটা যত ছোট কাজই হোক না কেন, তোমার দক্ষতা বা গুনাবলিকে কাজে লাগিয়ে অনেক কিছুই পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারবে।
আমার গুনাবলির ভিতরে একটি গুন হচ্ছে প্রতিনিয়ত শেখা এবং সামনের দিকে এগিয়ে চলা।
আমি যেকোন পরিস্থিতিতে আমার দক্ষতাকে বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে থাকি, যেমনঃ যখন আমি কোন ভোক্তাকে ফোন করি সেখানে আমি একজন ভোক্তা থেকে প্রকৃত ভক্তকে জয় করে থাকি, যখন কোন কাজ করি সেটা শুধুমাত্র কাজ করার জন্য করে থাকি না বরং সেটাকে নৈপুন্যতার সাথে শেষ করার চেষ্টা করি, যখন কোন কাজ সম্পন্ন করি সেটা শুধু মাত্র শেষ করে থাকি না সেই কাজ থেকে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করি।
২. নিজের গতিপথ খুঁজে বের করাঃ
একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য স্থাপন করতে হবে। এবং সেটা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
যেমন, যখন আমাকে কোন কিছুর দায়িত্বে দেওয়া হয়ে থাকে, আমি নিজেকে মনে করিয়ে থাকি, আমাকে এই কাজটি দেওয়া হয়েছে সবার ভালোর জন্য। এটা আমাকে আমার কাজে স্থির থাকতে সহযোগিতা করে এবং এক্ষেত্রে আমি নিজে যা জানি তা সম্পুর্ন কাজে লাগাতে পারি।
৩.কারন খুজে বের করাঃ
প্রায়ই এমনটি হয়ে থাকে যখন তুমি কোন কাজ ভুল কারনবশত করে থাক।সেই কাজটি কি আসলেই শুধুমাত্র করতে হবে বলেই করছো নাকি কোন কিছু শেখার জন্য করছো? এভাবে তোমার প্রশ্ন করার ধরনটি পরিবর্তন করে নিজের প্রতিভাকে প্রজ্জ্বলিত করে তোল।
৪. কাজের ধরন পরিবর্তন করাঃ
কোন কাজকে শুধুমাত্র শেষ করার জন্য না করে কাজটাকে আরও আনন্দদায়ক করে তুলতে পার সেই কাজটিকে সঠিকভাবে করার মাধ্যমে।
আমি মনে করি কাজকে নৈপুন্যতার সাথে করা হলে সেটি আরও দক্ষভাবে করা যায়।
মাঝে মাঝে ধীরস্থির কাজ করা ভালো। তবে অন্যদিকে কাজকে দ্রুততার সাথেও করার অভ্যাস করতে হবে। তুমি কাজটি সঠিক সময়ে শেষ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেধে নিতে পার।এভাবে কাজের ধরন পরিবর্তন করে তুমি তোমার পুর্বের অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসতে পার।
৫.অনুভুতিগুলোকে মনে রাখাঃ
যেকোন পরিবর্তিত দৃশ্যের সাথে তোমার অনুভুতির পরিবর্তনকে মনে রাখতে পার।
যখন তোমার ভালো অনুভুতি হয় সেটা তোমাকে অনুপ্রেরনা দিয়ে থাকে।
৬.অতীত থেকে বর্তমান এবং বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে পরিবর্তনঃ
সময়ের প্রয়োজনে অনেক সময় যেখানে সেখানে থাকতে হয়, সময়ের এই সুন্দর পরিবর্তন মানুষকে সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে বাধ্য করে, অথবা কোন মজাদার অতীতের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
একই সময়ে যদি অতীতের কোন দুঃখজনক ঘটনা তোমাকে ব্যাথিত করে তোলে তাহলে ঠিক সেই মুহুর্তে বর্তমান সময়ে ফিরে এসে বর্তমানের মুহুর্তগুলো থেকেই সুন্দর কোন মুহুর্ত খুজে নিতে হবে।
তোমার দক্ষতাকে অনুশীলনের মাধ্যমে আরও উন্নত করে তুলতে পার।
৭.নতুন উপমা খুজে বের করাঃ
এমন কোন উপমা খুজে বের কর যা তোমাকে প্রোজ্জ্বলিত করে তুলবে, হতে পারে তোমার মধ্যে এমন কোন গুন রয়েছে যা অতি সামান্য হলেও তা বড় কোন কাজের ক্ষেত্রে কার্যকরি হতে পারে।
তাই সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন হল নিজের দক্ষতাকে আরও কার্যকরি করে তোলে এমন কোন উপমা খুজে বের করা।এটাই আমার সব ধরনের কাজকে দুঃসাহসিক করে তোলে।
৮. পদক্ষেপ গ্রহন করাঃ
একটি সুত্র আছে যেমন, যখন তুমি কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ থাক সেটা কাজে লাগিয়ে তোমার জীবন বদলে দিতে পার। অনেক ক্ষেত্রে অনুপ্রেরনার আগে পদক্ষেপ গ্রহন করা বেশ কার্যকরি প্রমাণ হয়ে থাকে।
সাধারনত এরকম হয়ে থাকে, তুমি একটি কাজ করা শুরু করলে, এবং সেই মুহুর্তে তোমার ভিতরে অনুপ্রেরনা জাগ্রত হল। যেমন, আমি সবসময় আমার কাজের ধরন দেখে অগ্রসর হয় না, তবে যখন একবার কাজটি করা শুরু করি, আমি আমার গতিপথ খুজে পাই।
৯. ভালো অনুভুতির সাথে সংযুক্ত থাকাঃ
ভালো অনুভুতির সাথে সংযুক্ত থাকার উপায় খুজে বের কর। ধরে নাও, এমন কোন কাজ করছো যেটা তোমার মোটেও পছন্দ না, সেক্ষেত্রে তুমি তোমার কাজটি করার সময় তোমার প্রিয় কোন গান শুনতে পার।তবে গানটি এমন হতে হবে যেটা তোমাকে ভালো অনুভুতি দেয় যার ফলে তোমার কাজের বিরক্তিটা কেটে যাবে। সেক্ষেত্রে তোমার সেই কাজটির জন্য তোমার আর বিরক্তিকর অনুভুতি হবে না।
১০. নিজেকে প্রফুল্ল রাখাঃ
মানুষ Peter Jackson, James Cameron এবং Stephenie Meyer উনাদেরকে বেশি পছন্দ করে থাকে নিজেদেরকে প্রভাবিত রাখার ক্ষেত্রে।তাঁরা সেই চলচিত্রগুলোই তৈরি করে থাকেন অথবা সেই বই গুলোই লিখে থাকেন যেগুলো তাঁদেরকে প্রভাবিত করে থাকে। তাঁরা তাদের আসক্তিগুলো তাঁদের কাজের সাথে সংযুক্ত করে থাকে এবং প্রতিবন্ধকতা গুলোর সমাধানের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করে থাকে না। তাঁদের অভ্যন্তরীন প্রতিবন্ধকতা দুর করে থাকে নিজেদের উদ্যমকে কাজে লাগিয়ে।
১১. বেছে নেওয়াঃ
তুমি নিজেকে অনুপ্রেরিত করতে পার কোন কাজ তোমার “করা উচিত” অথবা “করতেই হবে” এই দুইয়ের মাঝে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে।
বেছে নেওয়ার এই শক্তিটা তোমার মধ্যে আরও বেশি অনুপ্রেরনা যোগাবে যখন বেছে নেওয়ার কাজটা তুমি নিজেই করবে।নিজের শব্দ গুলো নিজে বেছে নাও এবং তা কার্যকর করে তুলো।
১২. যোগসুত্র তৈরী করাঃ
যখন কোন কিছু মজাদার করার ইচ্ছা হয়ে থাকে আমি এই উপায়টি অনুসরন করে থাকি। যে কাজটি একজনের জন্য কষ্টদায়ক সেটা আরেকজনের জন্য আনন্দদায়ক হতে পারে। এমন কারো সাথে যোগসুত্র তৈরি কর যে কিনা তোমাকে তোমার দক্ষতার জন্য প্রসংশা করে থাকে অথবা তোমাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে এবং হতাশা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসতে পারে।
১৩. প্রশ্ন করার ধরন পরিবর্তন করাঃ
অনেক সময় নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হয়। দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে নিজের প্রশ্ন কেও পরিবর্তন করতে হবে।
যদি কোন পরিবর্তিত অবস্থার পেছনের কারন জানার জন্য নিজেকে প্রশ্ন করে থাকো, তাহলে তুমি নিজেই সমস্যাগুলো বের করতে পারবে।নিজেকে প্রশ্ন করো যেকোন পরিবর্তিত অবস্থার পিছনে সঠিক কোন কারন আছে কিনা, তাহলে দেখা যাবে তুমি নিশ্চিত কোন উত্তর পেয়ে গিয়েছো এবং গতানুগতিক ভাবধারা থেকেও বেরিয়ে এসেছ।
১৪. খাওয়া, ঘুম এবং কাজের একটি নির্দিষ্ট সময় বের করাঃ
যখন তোমার শরীর ও মন কে বিশ্রাম দিয়ে থাকো না তখন তারা প্রায়ই তোমার বিপরীতে কাজ করে থাকে।
এর জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, খাওয়া ঘুম এবং কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা।
১৫. নিজের শক্তিগুলোকে কাজে লাগানোঃ
নিজের দুর্বলতা নিয়ে অতিরিক্ত ভাবার ফলে সেটা তোমাকে আরও বেশি দুর্বল করে দিতে পারে।অন্যদিকে নিজের শক্তিগুলোকে নিয়ে চিন্তা করলে সেটা থেকে আরও ভালো কিছু করা যেতে পারে এবং এটা কাজের গতিও বৃদ্ধি করে।
শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তুমি তোমার আরও উন্নত করে তুলতে পার। এমন কোন কাজ খুজে বের কর যেটা করতে তোমার বেশি ভালো লাগে এবং যে কাজটা করে তুমি সারাদিন পার করে দিতে পারবে।সফলতা নিজের উপর, যেটা তোমাকে আরও বেশি প্রেরনা দিবে।
অনুপ্রেরনার এই সুত্রগুলোকে চেষ্টা করে দেখতে পার তোমার নিজের ক্ষেত্রে এটা কতটুকু কার্যকরি।
সবশেষে, সব অনুপ্রেরনাই আত্ম – প্রেরনা থেকেই আসে, এবং তুমি তোমার অনুপ্রেরনা গুলোকে আরও বেশি কাজে লাগাতে পারবে আত্ম -সচেতনতা তৈরি করে।