কুমারী, সুন্দরী, দাম ১২৫০০ ডলার…‘কুমারী, সুন্দরী, বয়স ১২ বছর। …পৌঁছে গেছে এবং খুব তাড়াতাড়িই বিক্রি হবে। দাম ১২৫০০ ডলার।’ হোয়াটসঅ্যাপ-টেলিগ্রাম অ্যাপে দেখা যাচ্ছে এমন বিজ্ঞাপন।
আনন্দবাজার পত্রিকায় বলা হয়, এই বিজ্ঞাপনটি যার সম্পর্কে দেয়া হয়েছে, সেই কিশোরী ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের। ইসলামিক স্টেট (আইএস ) জঙ্গিদের হাতে বন্দী সে। তাকে এখন বিক্রি করে দিচ্ছে জঙ্গিরা। ভাল খরিদ্দার পেতে হোয়াটসঅ্যাপে, টেলিগ্রাম অ্যাপে বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে।
২০১৪ সালের আগস্ট নাগাদ সিরিয়ার ইয়াজিদি এলাকা দখল করে নেয় আইএস। কুর্দি-ভাষী সংখ্যালঘু এ সম্প্রদায়য়ের গ্রাম উজাড় করে দেয়া হয়। বহু ইয়াজিদি পুরুষকে খুন করে জঙ্গিরা। আর ইরাক, সিরিয়াসহ মধ্য এশিয়ায় বসবাসকারী এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মহিলা, তরুণী, কিশোরী ও শিশুকে অপহরণ করে বন্দী করে তারা। এরপর এই সব নারী, কিশোরীদের যৌনদাসী বানায় আইএস।
কিশোরী, তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের নারীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় আইএস জঙ্গি শিবিরে। যাদের মালিকানা তুলে দেয়া হয়েছে কোনো না কোনো আইএস নেতা বা যোদ্ধার হাতে। এরপর তারা সেই বন্দীদের যৌনদাসীতে পরিণত করে। গত কয়েক বছর ধরে ধর্ষণের পর এই ইয়াজিদি মেয়েদের এবার বিক্রি করে দেয়া শুরু করেছে আইএস।
ইরাক এবং সিরিয়ায় কর্মরত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হয়, মোটা টাকা উপার্জনের জন্য আইএস বর্তমানে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের এ সব নারীদের অনেককেই বিক্রি করে দিচ্ছে। কারণ ন্যাটো এবং রুশ বাহিনীর দ্বিমুখী হামলায় তেলের খনিগুলো হাতছাড়া হয়ে পড়ছে তাদের। এছাড়া তারা ক্রমশ জমি হারাচ্ছে। ফলে আর্থিক অবস্থা বেশ সঙ্কটে আইএস জঙ্গিদের। তাই তারা নিজেদের আর্থিক সঙ্কট মোকাবেলায় তাদের জিম্মায় থাকা ইয়াজিদি মেয়েদের বিক্রি করে দিচ্ছে। আর নিজেদের জন্য কিছু টাকা রোজগার করে নিতে চাইছে। এ জন্য ভাল খরিদ্দার পেতে হোয়াটসঅ্যাপে, টেলিগ্রাম অ্যাপে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে তারা।
এদিকে অনেক ইয়াজিদি মহিলা জঙ্গি শিবির থেকে পালিয়েও গিয়েছেন। এ সব মহিলাদের আইএস শিবির থেকে গোপনে উদ্ধার করে নিরাপদে সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে একদল চোরাকারবারী। তাদের সহায়তায় অনেক মহিলা পালিয়ে এসে গণমাধ্যমকে আইএসের নির্যাতনের কথা জানিয়েছে।
এদিকে ইয়াজিদি মহিলাদের পালানো রুখতে এখন আইএস নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছে। কোনো ইয়াজিদি মেয়ে কার মালিকানাধীন, ছবিসহ সে সব রেজিস্ট্রি করে করে রাখা হচ্ছে। এই মুহূর্তে আইএস জঙ্গিদের হাতে অন্তত ৩০০০ ইয়াজিদি যৌনদাসী রয়েছে।