ফেনীতে নুরে জান্নাত নামে এক মাদরাসা শিক্ষিকার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেলের মর্গে প্রেরণ করেছে। নিহত নুরে জান্নাত ফেনী শহরের তানজিমুল উম্মাহ মহিলা মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন।
স্বামী মাহমুদ হাসানের পৈতৃক বাড়ি চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোলার হাট উপজেলায়। স্বামী ও স্ত্রী একই মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন এবং মাদরাসার পাশেই ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
জানা যায়, তিন বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। দুইজন সম্পর্কে মামাতো ফুপাতো ভাই ছিলেন। বিয়ের পর একটা সন্তান হলেও সন্তানটি মারা গেছে। গত কিছুদিন থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কিছুটা মনোমালিন্য দেখা দেয়।
নিহতের স্বামীর ভাই হুছাইন আহাম্মদ বলেন, কয়েক দিন আগে গোপনে ভাবী একটি মোবাইল ফোন কিনেছিলেন। ওই ফোনে অন্য একজনের সঙ্গে আড়ালে কথা বলেন। ভাই এ বিষয়টি টের পেয়ে মেনে নিতে পারেননি। এ নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ভাই মোবাইল ফোনটা নিজের হেফাজতে নিয়ে যায়। এতেই ভাবী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।
ফেনী মডেল থানার ওসি মো. নিজাম উদ্দিন এক শিক্ষিকার লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই শিক্ষকের স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
গোপনে ইবি ছাত্রীর গোসলের ভিডিও ধারণ, নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
ভাড়া বাসায় গোপনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীর গোসলের ভিডিও ধারণ করার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকার মেসগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে হয়রানির ঘটনায় প্রশাসনের অদক্ষতা বলে আখ্যায়িত করেছেন তারা।
গতরাতের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, শতভাগ আবাসনের দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন। বুধবার (৩১ আগস্ট) শাখা ছাত্র মৈত্রী, ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের আয়োজিত পৃথক পৃথক কর্মসূচিতে এ দাবি জানানো হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছেন।
বেলা ১১টায় ছাত্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের মানববন্ধন করেন। সংঠনটির মুতাসিম বিল্লাহ পাপ্পুর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা অংশ নেন। অন্যদিকে দুপুর ১২টার দিকে একই স্থানে শাখা ছাত্রলীগের আয়োজিত মানববন্ধনে সংগঠনটির সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত ও নাসিম আহমেদ জয়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এছাড়া মানববন্ধন শেষে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ভিসির পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া।
এদিকে দুপুর দেড়টার দিকে ক্যাম্পাসে ডায়না চত্ত্বর সংলগ্ন ঝালমুড়ি চত্ত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে মানববন্ধন করে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ। এসময় সংগঠনটির সভাপতি জি.কে. সাদিক ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক পিয়াসের নেতৃত্বে সংগঠনটির অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে ছাত্র মৈত্রীর ইবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মুতাসিম বিল্লাহ পাপ্পু বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এসব বিষয়ে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আমরা দেখিনি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে শতভাগ আবাসিকতার আওতায় আনার এবং ক্যাম্পাসের ভেতরে-বাইরে সকল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিকরণের দাবি জানাচ্ছি।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, আজকে যদি আমাদের ক্যাম্পাসে শতভাগ আবসিকতা নিশ্চিত থাকতো তাহলে আমার বোনের সাথে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতো না। আমাদের ক্যাম্পাসকে শতভাগ আবাসিকতার আওতায় আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচারের দাবি করছি।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জি.কে. সাদিক বলেন, সম্প্রতি এক ছাত্রীর সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা আমাদের মর্মাহত করেছে। অতিদ্রুত আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। এর আগেও স্থানীয়দের দ্বারা শিক্ষার্থীরা নানাভাবে হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছে। প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিলেও নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত হয় নাই। এসময় তিনি ইবি থানা ও শৈলকূপা থানার কম্বিনেশন করে একটি পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণের দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (২৯ আগস্ট) ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া এলাকায় একটি বাড়া বাসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপনে এক ছাত্রীর গোসলের ভিডিও ধারণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী মঙ্গলবার সকালে ভিডিও উদ্ধার ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন এবং শৈলকূপা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ভূক্তভোগী। জিডি নম্বর-১৬২৬।
এ বিষয়ে শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা তদন্ত অব্যাহত রেখেছি। সবকিছু আইনী প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।