চাঞ্চল্যকর ধ’র্ষ’ণকান্ডের পরে মুখ খুলছেন অনেক ভুক্তভোগী। সেখানে মনোরঞ্জনের জন্য আসা শতাধিক পর্যটক, কটেজ ও কর্মরত কর্মচারীদের উ’ল’ঙ্গ ভিডিও ধারণ করে অর্থ আদায়ের অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে ।
নারী পর্যটককে দলবেঁধে ধ’র্ষ’ণের ঘটনায় দেশের সব মহল থেকে তুমুল আলোচনা-সমালোচনায় তোলপাড় সামাজিকমাধ্যম। বিভিন্ন মহলে এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে ‘চুলচেরা’ বিশ্লেষণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নজন তাদের নিজস্ব ‘মতামত’ ব্যক্ত করছেন ।
স্বামী-সন্তান জিম্মি করে কক্সবাজারে পর্যটক নারীকে ধ”র্ষ’ণকাণ্ডের মূলহোতা আশিকুল ইসলাম আশিকের বিষয়ে বের হয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ বলছে, তার নামে শুধু কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, ইয়াবা, ছিনতাইসহ অন্তত ১৬টি মামলা রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের মূলহোতা আশিক। তার নেতৃত্বে রয়েছে ৩২ জনের একটি অপরাধী চক্র। সুত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন শহরে নানান অপরাধ করে যাচ্ছে এই সিন্ডিকেট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কক্সবাজারের একটি স্থানীয় পত্রিকাসহ স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এর প্রতিনিধি।
ধ’র্ষ’ণের ঘটনা জনসম্মুখে আসার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষক আশিকের সাথে জেলার স্থানীয় নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ ছবি ভাইরাল হচ্ছে। চাঞ্চল্যকর ধ’র্ষ’ণকান্ডের পরে মুখ খুলছেন অনেক ভুক্তভোগী। সেখানে মনোরঞ্জনের জন্য আসা শতাধিক পর্যটক, কটেজ ও কর্মরত কর্মচারীদের উ’ল’ঙ্গ ভিডিও ধারণ করে অর্থ আদায়ের অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে ।
শুধু তাই নয়, অভিযোগ উঠেছে, গত দেড় মাসে কক্সবাজার শহরের কটেজ জোন লাইটহাউস সরণি এলাকায় যৌ”নপল্লী হিসেবে পরিচিত লাভ করা কয়েকটি কটেজে নিয়মিত হানা দিয়ে সেখানকার অর্ধশতাধিক তরুণীকে (যৌ’নকর্মী) তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ধ’র্ষ’ণ’ করেছে আশিক এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গরা।
সূত্রে জানা গেছে, লাইট হাউস সরণি এলাকায় অর্ধশতাধিক কটেজে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে দিনরাত। এসব কটেজে নারী ছাড়াও হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মরণ নেশা ইয়াবা। পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায়ই রাত সাড়ে ৯ থেকে ১২টা পর্যন্ত একাধিকবার এসব কটেজে হানা দেয় আশিকের নেতৃত্ব তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। এ সময় কটেজে থাকা মেয়েদের মারধরের পর তাদের মোবাইল, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
পাশাপাশি পছন্দমতো সুন্দরী মেয়েদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধ’র্ষ’ণ করে আশিক ও তার গ্রুপ । সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দেড় মাসে অন্তত ৫০ বারের বেশি একইভাবে হানা দিয়েছে আশিক। প্রত্যেকবারই ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো না কোনো তরুণীকে ধ’র্ষ’ণ করেছে আশিক এবং তার সঙ্গীরা।
একটি জাতীয় দৈনিককে দেয়া সাক্ষাতকারে আশিকের পাশবিক ধ”র্ষণের শিকার (ছদ্মনাম) আঁখি আক্তার নামের ঢাকার একটি পাবলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী এক তরুণী জানান, আমার বাবা মারা গেছে বেশ কয়েক বছর আগেই।
এরপরও আমি পরিবারের ভার বহনের পাশাপাশি নিজেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। করোনার ধাক্কায় টিউশনি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সীমাহীন আর্থিক সংকটে পড়ে যাই । অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা ছোট-ভাইবোনদের পড়াশোনা প্রায় বন্ধের উপক্রম। একপর্যায়ে আমার এক বান্ধবীর ফাঁদে পড়ে গত ৬ মাস ধরে কক্সবাজারে চলে আসি। এরপর বাধ্য হয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ি। তার দাবিমতে, গত মাসে ২৪ বা ২৫ নভেম্বর রাতে আমের ড্রিম কটেজে হানা দেয় আশিক।
তখন তার ভয়ে সেখানকার কর্মচারী সবাই সটকে পড়েন। আশিক প্রথমে ছুরি মারার ভয় দেখিয়ে কটেজে থাকা সব মেয়েদের পাশাপাশি সেখানে মনোরঞ্জনের জন্য অবস্থান করা অন্তত ১৫ জন পর্যটকের মোবাইল ও টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়। পরে পর্যটকদের উ’ল’ঙ্গ করে মেয়েদের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে ভিডিও ধারণ করে। পরে কারো কারো মোবাইল ফিরিয়ে দিয়ে তাদের মোবাইল নাম্বার নেয় আশিক ও তার লোকজন।
আঁখি আক্তার বলেন, ওই দিন আমাকে উ’ল’ঙ্গ অবস্থায় ভিডিও করে আশিক। তবে যাওয়ার সময় মোবাইল নাম্বার নিয়ে তার ফোনটি ফেরত দিয়ে মোবাইল বন্ধ পেলে ভিডিও ভাইরালের হুমকি দেয় আশিক। তিনি বলেন, ঘটনার একদিন পর আমাকে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে দেখা করতে বলে আশিক।
দেখা করার পর ওই রাতে অপরিচিত একটি বাড়ির ফ্ল্যাটে নিয়ে ইয়াবা সেবন করে রাতভর দফায় দফায় ধ”র্ষণ করে আশিক আর তার আরেক বন্ধু। তার দাবি, আশিক অন্তত ৪০ থেকে ৫০ জন মেয়ের সঙ্গে একই ধরনের আচরণ করেছে বলে শুনেছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব অভিযোগ অকপটে স্বীকার করেছেন ওই সব কটেজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি। তারা জানান, শুধু কটেজের অর্ধশতাধিক মেয়েদের জোরপূর্বক ধ”র্ষণ ও তাদের টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়েছেন তা নয়; গত এক মাসে এসব কটেজে মনোরঞ্জনের জন্য আসা কয়েকজন পর্যটক ও কটেজের মালিক-কর্মচারীদের ধরে নিয়ে তাদের উ’ল’ঙ্গ করে মেয়েদের সঙ্গে ছবি তুলে মুক্তিপণ আদায় করেছে আশিক।
সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যমতে, গত কয়েক দিন আগে আমের ড্রিম কটেজের স্টাফ আমান উল্লাহ ও ঢাকার বাড়ি কটেজের স্টাফ নাহিদকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের মারধর ও উ’ল’ঙ্গ করে ভিডিও ধারণ করে আশিক। এরপর তাদের জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করে।
এসব কটেজের ব্যবসায়ীরা জানান, নিজেরা অসামজিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকায় আশিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে ভয় পেয়েছেন তারা। তবে মাসিক মাসোহারা আদায় করা পরিচিত পুলিশ অফিসারদের আশিকের বিষয়ে অভিযোগ দিলে তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন।
এদিকে কক্সবাজার শহরের এসব অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধের পাশাপাশি ধর্ষ”ণে জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, কটেজ ব্যবসায়ী বা পর্যটকদের কেউ অবগত করেননি। এরপরও অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।
একই সঙ্গে অসামাজিক কার্যকলাপ চলা কটেজগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, এর আগে কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধ’র্ষ’ণের ঘটনায় আশিকুল ইসলাম আশিককে প্রধান আসামি করে ধ’র্ষি’তার স্বামী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৩ জনসহ মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে ধ’ণের মামলা দায়ের করেন।
এখন পর্যন্ত তিন জনকে শনাক্ত করেছে র্যাব। তারা হলো, কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে আশিকুল ইসলাম আশিক ও তার সহযোগী ইস্রাফিল হুদা জয়, মেহেদী হাসান বাবু। র্যাব ও পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, তারা ছিনতাইকারী।
ঘটনার রাতে দফায় দফায় ধ’র্ষ’ণের শিকার এক নারী পর্যটককে বুধবার রাত দেড়টায় শহরের হোটেল মোটেল জোনের ‘জিয়া গেস্ট ইন’ নামের আবাসিক হোটেলের ২০১নং কক্ষ থেকে উদ্ধার করে কক্সবাজারের র্যাব-১৫ এর একটি দল। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে ওই নারীর অভিযোগ ছিল ৯৯৯-এ কল দেওয়ার পর কক্সবাজার সদর থানা থেকে তাকে জিডি করতে বলা হয়। পরে র্যাবের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন ওই নারী পর্যটক।
র্যাবের কাছে তিনি অভিযোগ করেন, বুধবার সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। সেখান থেকে বিকেলে যান সৈকতের লাবনী পয়েন্টে। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথা-কাটাকাটি হয়।
এর জেরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজি অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আরেকটি সিএনজি অটোরিকশায় তাকে তুলে নেয় তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধ’র্ষ’ণ করে তিনজন। ধ’র্ষ’ণ শেষে তাকে নেওয়া হয় ‘জিয়া গেস্ট ইন’ নামে একটি হোটেলে।