সাধারণত পুকুর কিংবা খাল-বিলে জল ঢোঁড়া সাপের দেখা মেলে। তবে শীত এলে উষ্ণতার খোঁজে ডাঙায় উঠে আসে বিষহীন এ সাপটি। তবে ডাঙায় ওঠা এক সাপ নিয়ে রীতিমতো তুলকালাম কাণ্ড চট্টগ্রাম নগরীর আকবরশাহ থানাধীন বিশ্বকলোনি এলাকার বি-ব্লক ভাণ্ডারি কলোনিতে। মৃত এক বৃদ্ধার আত্মা নিয়ে সাপটি ফিরে এসেছে বলে ছড়ানো হচ্ছে গুজব। আর এ গুজবে সাপটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শতশত মানুষ।
জানা গেছে, ১৯ ডিসেম্বর ভোরে নিজ বাসায় আগুনে পুড়ে মারা যান বৃদ্ধা রেজিয়া খাতুন। প্রতিবেশীর কাছে তিনি ‘কাউয়ার মা’ নামে পরিচিত ছিলেন। প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে ওই কলোনিতে ভাড়া থাকতেন তিনি।
ঘটনার দিন প্রতিবেশীরা মেয়েটি উদ্ধার করলেও রেজিয়াকে বের করতে পারেননি। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর শুরু হয় জল ঢোঁড়া সাপ নাটক। সাপ হয়ে মৃত বৃদ্ধা ফিরে এসেছেন বলে এলাকায় গুজব ছড়ায় । কলোনিতে মৃত বৃদ্ধার পরিবারের কেউ না থাকলেও এ সাপকে ঘিরে পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা এখন মহাব্যস্ত।
কলোনির বাসিন্দা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, সকালে রোজিয়ার ঘরে সাপটি আমারা দেখতে পাই। এরপর অনেকক্ষণ ওই স্থানে সাপটি পড়ে থাকে। পরে আমরা সাপটিকে দুধ-কলা এনে দেই। তিন সপ্তাহ ধরে সাপটি এভাবেই রয়েছে। রেজিয়া ধার্মিক মহিলা ও দরবার শরীফের ভক্ত ছিলেন। হয়তো আল্লাহর উছিলায় তিনি এভাবে ফিরে এসেছেন।
কলোনিতে গিয়ে দেখা গেছে, সাপটি ঘর থেকে বাইরে এনে খোলা জায়গায় ছোট একটি ঘর বানিয়ে রাখা হয়েছে। ঘরের সামনে জ্বলছে মোমবাতি ও আগরবাতি। সামনে দর্শনার্থীদের ভিড়।
কলোনির বাসিন্দারা বলেন, মৃত মহিলা দরবার শরীফের ভক্ত ও পীর কামেল ধরনের মানুষ ছিলেন। সাপটি যেহেতু কোথাও যাচ্ছে না, তাই আমরা যত্ন করে লালন করছি। এটা কি সাপ জানতে চাইলে তারা বলেন, কয়েকজন বেদে এসে এটা জল ঢোঁড়া সাপ নিশ্চিত করেছে।
কলোনি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে আকবরশাহ শাপলা আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী বৃদ্ধার মেয়ে পিংকি আক্তার বলেন, সাপটি আমিও দেখতে গিয়েছি। আমার মা হঠাৎ মারা গেলেন এবং এরপর এ ঘটনা। হয়তো আল্লাহর কোনো কদরতিও হতে পারে।
পুরো এলাকা এ ঘটনা রটে গেলেও ক্ষুব্ধ এলাকার সচেতন মানুষ। তাদের একজন মো. জাকির বলেন, কলোনির কিছু অশিক্ষিত মানুষের ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে এ রটনা। এর পেছনে হয়তো অন্য কোনো উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। ইসলাম ধর্ম এ ভণ্ডামি সমর্থন করে না।
বি-ব্লক এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান রাকিব বলেন, কয়েকদিন ধরে এ ঘটনা চলছে। এখন ফুল, আগরবাতি ও মোমবাতি দিয়ে স্থায়ী জায়গা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো দেখা যাবে মাজার তৈরি করে ফেলেছে তারা। এখন অপেক্ষায় আছি এটা কতটুকু পর্যন্ত গড়ায়।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের কেউ কেউ মনে করেন, রেলওয়ের জায়গায় গড়ে ওঠা এ কলোনিটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য হয়তো বা এদের কোনো ফন্দিও হতে পারে।