গত ১৩ ডিসেম্বর নরসিংদীর রায়পুরায় ধানখেত থেকে রুনা আক্তার নামে এক গৃহবধূর চোখ উপড়ানো মরদেহ উদ্ধার হয়েছিল। তার স্বামী আবুল কালাম মিয়া সৌদিপ্রবাসী। কিন্তু নানা ঘটনার পর স্থানীয় খোরশেদ আলমের সঙ্গে রুনা আক্তারকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। স্বামীর অবর্তমানে দ্বিতীয় বিয়েতে রাজি না হওয়ায় হত্যার শিকার হন রুনা।
এ ঘটনায় গতকাল শনিবার বিকেলে নেত্রকোনার কমলাকান্ত নরসিংদী রায়পুর থেকে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতাররা হলেন একই এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাক।
রোববার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।
এএসপি মুক্তাধর বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর নরসিংদীর রায়পুরার চরমরজালের একটি ধানখেত থেকে রুনা আক্তার নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ভুক্তভোগী রুনা আক্তারের স্বামী আবুল কালাম মিয়া সৌদি প্রবাসী। তাদের ৩ সন্তান রয়েছে। কালাম মিয়া সৌদি আরব যাওয়ার সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ঋণ নেন। কিন্তু যাওয়ার পর পরিবারের কোনো খরচ না দিয়ে উল্টো রুনা আক্তারকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেনা পরিশোধ করার জন্য চাপ দেন কালাম মিয়া। পরিবারের সদস্যরাও তার ওপর টাকা পরিশোধের জন্য নির্যাতন চালালে রুনা আক্তার থানায় নারী নির্যাতন মামলা করেন। পরিবার থেকে মামলা তুলে নেওয়ার চাপ দেওয়া হলে তিনি (রুনা) তার মামার বাসায় চলে যান। সেখানে দিনমজুরের কাজ করে সন্তানের ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করেন তিনি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মুক্তা ধর বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রুনা বাবার বাড়ি থেকে মামার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে আর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত ৮টার দিকে পরিবারের সদস্যরা তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার নম্বর বন্ধ পান। ১৩ ডিসেম্বর সকালে স্থানীয় লোকজন গ্রামের ধানখেতে রুনার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় পিতা মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ঘটনায় সিআইডি তদন্ত করলে জানতে পারে, স্থানীয় খোরশেদ আলমের সঙ্গে রুনা আক্তারকে বিয়ের ব্যবস্থা ও বিভিন্ন খরচের কথা বলে খোরশেদ আলমের থেকে ৯০ হাজার টাকা নেন একই এলাকার রাজ্জাক। বিয়েতে রুনা আক্তার সম্মতি না দেওয়ায় খোরশেদ আলম রাজ্জাককে তার টাকা ফেরত দিতে বলেন।
তিনি আরো বলেন, ১২ ডিসেম্বর রুনা আক্তার বের হলে প্রথমে রাজ্জাক ও খোরশেদ আলমের সঙ্গে দেখা হয়। এ সময় ৩ জনের মাঝে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে রুনা আক্তারের গলার ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার সঙ্গে আরো যারা জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।