ভারতের মধ্যপ্রদেশে বন থেকে হঠাৎই লোকালয়ে এসে দেড় বছরের এক শিশুকে আক্রমণ করে বসে বাঘ। তাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শিশুটির মা অর্চনা চৌধুরী তখন সন্তানকে বাঁচাতে খালি হাতেই বাঘের সঙ্গে লড়াইয়ের চেষ্টা চালান। কয়েক মিনিট ধরে চলে সে লড়াই। পরে এলাকাবাসী এসে তাঁদের উদ্ধার করে। আহত অবস্থায় মা ও সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গত রোববার মধ্যপ্রদেশের বান্ধবগড় টাইগার রিজার্ভ এলাকার কাছে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সময় অর্চনা এবং তাঁর ছেলে একটি মাঠে ছিলেন।
ভারতে বাঘের জন্য সংরক্ষিত এলাকাগুলোর কাছে বসবাসকারী মানুষের ওপর জীবজন্তুর হামলা নতুন কিছু নয়। বিবিসি হিন্দিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গ্রামবাসী বলেন, শুধু বাঘই নয়, হাতিও তাঁদের গ্রামে ঢুকে ফসল নষ্ট করে ফেলে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাঘটি ওই শিশুর মাথার মধ্যে দাঁত বসিয়ে শিশুটিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তখন শিশুটিকে বাঁচাতে মা বাঘের সঙ্গে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন। ওই নারীর চিৎকার শুনে আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা লাঠি নিয়ে সেখানে ছুটে আসেন এবং বাঘটিকে তাড়িয়ে দেন।
জানা গেছে, ওই মায়ের ফুসফুসে বাতাস চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। তাঁর শরীরেও গভীর ক্ষত আছে। আর শিশুটি মাথায় আঘাত পেয়েছে।
বিবিসি হিন্দিকে এক চিকিৎসক বলেন, শিশুটির শরীরের আঘাত গুরুতর নয়। তবে মা গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। জাবালপুর শহরের সিভিল সার্জন মিষ্টি রুহেলা বলেছেন, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মা ও শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুজনকেই জলাতঙ্কের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে বাঘটি গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। ভারতের বন বিভাগের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের বিভাগের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ওই বাঘকে খুঁজে বের করে আটকে ফেলা।
সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সঞ্জীব শ্রীবাস্তব বিবিসি হিন্দিকে বলেন, আর কোনো বাঘ যেন সংরক্ষিত এলাকা থেকে না পালাতে পারে, তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ভারতজুড়ে যেসব মানুষ বনাঞ্চল এবং ন্যাশনাল পার্কের কাছাকাছি থাকেন, তাঁরা ক্রমাগত মানুষ ও বন্য প্রাণীর মধ্যে লড়াইয়ের ঘটনা বাড়তে দেখেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত নগরায়ণের কারণে প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। সে কারণে বন্য জীবজন্তু শিকার ও আশ্রয়ের খোঁজে বিভিন্ন গ্রাম ও শহরে হানা দিতে বাধ্য হচ্ছে।