ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ফাস্ট-ফুড বিক্রেতা এক যুবককে মিথ্যা চুরির দায়ে দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। শার্ট চুরি ও মোবাইল চুরির অভিযোগে মোহাম্মদ পারভেজ (১৭) নামের ফাস্ট-ফুড বিক্রেতাকে এ নির্যাতন করা হয়।
অভিযুক্তরা সবাই হলের শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে হলের মূল ফটকের সামনে (যেখানে তারা ফাস্টফুড বিক্রি করে) থেকে পারভেজ ও তার বড় ভাই রাকিবকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের টিনশেড বিল্ডিংয়ের ১৮ নম্বর কক্ষে (গণরুম)। সেখানে পারভেজকে মুখে থাপ্পর, পিঠে এবং পশ্চাৎ-ভাগে স্টাম্প নিয়ে মারধর করে। রাত আটটা পর্যন্ত এ নির্যাতন চলে। সেখানে হলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো।
জানা যায়, গত একমাস আগে টিনশেড বিল্ডিংয়ের ১৮ নম্বর কক্ষ থেকে আরিফ হোসাইন (প্রথম বর্ষ) নামের এক শিক্ষার্থীর দুটি শার্ট এবং কক্ষ থেকে কয়েকজনের মোবাইল হারিয়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যায় পারভেজের গায়ে ঐ শার্ট দেখা গেলে তাকে রুমে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেসময় সে স্বীকার করে যে শার্ট দুটি সে ময়লার স্তুপে পায়। পরে সেগুলো পরিষ্কার করে সে গায়ে দিচ্ছে, চুরি করেনি। তবে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য চুরির অভিযোগ এনে তাকে নির্যাতন করে।
ঘটনার সম্পর্কে ভুক্তভোগী পারভেজ জানায়, আমি যদি শার্ট দুটি চুরি করতাম তাহলে আমি এগুলো আবার হলে পরে নাস্তা বিক্রি করতাম না। শার্ট দুটি আমি ময়লার উপরে পেয়েছি তাই পরিষ্কার করে আমি ব্যবহার করছি। সত্যি কথা বলার পরও একজন ভাই আমার মা-বাবাকে নিয়ে গালিগালাজ করে। শার্ট চুরির পাশাপাশি মোবাইল আর মানিব্যাগ চুরির অভিযোগে চারজনে ধরে স্টাম্প ও রট নিয়া মারধর। আরেকজন মুখে থাপ্পর মারে।
পারভেজের বড় ভাই মো. রাকিব জানায়, টিনশেড বিল্ডিং থেকে একজন ভাই আমাদের দুইভাইকে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ডেকে নিয়ে যায় ১৮ নম্বর রুমে। তখন রুমে ৫/৬ জন ছেলে ছিলো। পরে ২০-৩০ জন ছেলে ঐ রুমে উপস্থিত হয়। তখন আমার ভাইকে কয়েকজনে ধরে মিথ্যা অভিযোগে এইভাবে নির্যাতন করে। আমাকে তখন রুমের একপাশে আটকে রেখেছিলো। রাত সাড়ে আটটার দিকে আমাদেরকে ছেড়ে দেয়। পরে এ বিষয়ে জানতে পারলে হলের সাবেক ভিপি সাইফুল্লাহ আব্বাছী অনন্ত, কামাল উদ্দিন রানা ও আরও কয়েকজন বড়ভাই এসে তাকে দেখে। এরপর কিছু টাকা দিয়ে দুইজন ছেলের মাধ্যমে মেডিকেলে পাঠায়।
এ বিষয়ে হল সংসদের সাবেক ভিপি সাইফুল আব্বাছী অনন্ত বলেন, কারো গায়ে হাত তোলা অধিকার কারো নেই। সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন এভাবে মারা উচিৎ হয়নি। ঘটনাটি অন্তত দুঃখজনক। শার্ট চুরি নয় বরং সে ময়লার উপরে পাওয়া শার্ট পরিষ্কার করে ব্যবহার করছে তা স্বীকার করেছে। কিন্তু তার উপর অন্যান্য অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি নিজে পরে প্রভোস্ট স্যারের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি৷ স্যার আশ্বস্ত করেছেন ছেলেটির যদি কোনো আর্থিকে সহযোগিতা লাগে তাহলে তা করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা শুনে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। পরে তার পরিবার এসে তাকে নিয়ে গিয়েছে। তার যাবতীয় সহায়তা করেছি। কারা এমন করেছে সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।