রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় গৃহকর্মীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে চিত্রনায়িকা সিমন হাসান একার বিরুদ্ধে পৃথক দুইটা মামলা দায়ের হয়। এ দুই মামলায় চিত্রনায়িকা একাকে কারাগারেও যেতে হয়েছে। বর্তমানে মামলা দুইটি তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে।
হাতিরঝিল থানার পুলিশ এ মামলা দুইটি তদন্ত করছে৷ তিন মাস পার হলেও এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি পুলিশ। তবে গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলায় আগামী ১৫ ডিসেম্বর এবং মাদকের মামলায় ২৮ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. ফয়সাল ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, মাদক মামলার ল্যাবরেটরি রিপোর্ট হাতে পেলে দ্রুত আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করব। এছাড়া গৃহকর্মী মারধরের মামলার মেডিকেল রিপোর্ট এখনো পায়নি। তবে এটা পেলে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করব।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই চিত্রনায়িকা একার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে গৃহকর্মী হাজেরা বেগম একটি মামলা এবং মাদক পাওয়ার অভিযোগে হাতিরঝিল থানার এসআই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। গত ১ আগস্ট আসামি একাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর রাজধানীর হাতিরঝিল থানার পৃথক দুই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে তিন দিন করে মোট ছয় দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. ফয়সাল। এ সময় আসামি পক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড ও জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গত ১০ আগস্ট হাতিরঝিল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের ভার্চুয়াল আদালত এক হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর ২২ আগস্ট গৃহকর্মীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করার অভিযোগে করা মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদের আদালত তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর চিত্রনায়িকা একা জামিনে মুক্তি পান।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী গৃহকর্মী গত তিন মাস ধরে অভিনেত্রী একার বাসায় কাজ করতেন। প্রথমে তার বেতন তিন হাজার টাকা হলেও পরবর্তীতে কাজ বেড়ে যাওয়ায় পাঁচ হাজার টাকা ঠিক হয়। প্রথম মাসের বেতন তিন হাজার টাকা দিলেও গত দুই মাসের বেতন একসঙ্গে চাইতে গেলে অভিনেত্রী একা তাকে দিয়ে আর কাজ করাবেন বলে জানান। তখন গৃহকর্মী হাজেরা বেগম বকেয়া বেতন চাইলে আসামি একা ঘর থেকে বের হয়ে গৃহকর্মীর গলা ধাক্কা দেয়। বেতন না দিলে যাবেন না বললে গৃহকর্মীকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। এ সময় গৃহকর্মী রুম থেকে বের না হওয়ায় আসামি একা দৌড়ে রান্না ঘর থেকে বটি নিয়ে এনে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ মারতে যায়৷ তখন গৃহকর্মী হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে তার হাত মারাত্মকভাবে জখম হয়। এ সময় গৃহকর্মী চিৎকার করলে তার মুখ চেপে ধরে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এরপর ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে পুলিশের মোবাইল টিমের সদস্যরা আসামি একার বাসা থেকে ভুক্তভোগী গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে৷
পরে চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় একার ফ্ল্যাট থেকে তাকে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হাতিরঝিল থানা পুলিশ। এ সময় সেখান থেকে পাঁচ পিস ইয়াবা, পঞ্চাশ গ্রাম গাঁজা এবং অর্ধেক বোতল কেরু মদ জব্দ করা হয়।
উল্লেখ্য, আহত গৃহকর্মীর গ্রামের বাড়ি শেরপুর সদরের হরিণধরা গ্রামে। তার স্বামীর নাম রফিক। বর্তমানে রাজধানীর পূর্ব উলুন রামপুরা বন্ধু নিবাস এলাকায় থাকতেন তারা।